ল্যাঞ্জা হরিয়াল | Pin tailed Green Pigeon | Treron apicauda

505
ল্যাঞ্জা হরিয়াল
ল্যাঞ্জা হরিয়াল | ছবিঃ ইন্টারনেট

ল্যাঞ্জা হরিয়াল বিরল দর্শন, আবাসিক পাখি। দেখতে অনেকটাই কবুতরের মতো গড়নের। সুদর্শনও বটে। যত্রতত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। দেখা মেলে উঁচু গাছের চির সবুজ বনের পত্রপল্লভের আড়ালে। ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট কিংবা বড় দলেও। দেখা যায়, ভোরে পাতাঝরা গাছের মগডালে বসে রোদ পোহাতে। বৃক্ষচারী এ পাখিরা জলপান ব্যতিরেকে মাটিতে নামে না খুব একটা। স্বভাবে শান্ত। গায়ে পড়ে স্বগোত্রীয় বা অন্য গোত্রীয় কারো সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় না।

প্রজনন ঋতুতে সুরেলা কণ্ঠে গান করে ‘কো-ক্লা-অই-অই-অইলি-ইলিও-ক্লা’। সুর শুনতে মন্দ নয়। এ প্রজাতির পাখি শুধু বাংলাদেশই নয়, দেখা যায় ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে। এতদাঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি এরা। সমগ্র বিশ্বে এদের বিস্তৃতি ১৬ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত। সংখ্যায় স্থিতিশীল বিধায় আই ইউ সি এন প্রজাতিটিকে নূ্যনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয়। এক সময়ে দেশের শৌখিন শিকারি দ্বারা ব্যাপক নির্যাতিত হওয়ার ফলে এবং উঁচু গাছের অভাবে এদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে বলে অভিমত পাখি বিশারদদের। ফলে এরা বিরল থেকে বিরলতম হয়ে উঠছে।

পাখির বাংলা নামঃ ল্যাঞ্জা হরিয়াল, ইংরেজি নামঃ পিন-টেইলড গ্রিন পিজিয়ন, (Pin-tailed Green Pigeonবৈজ্ঞানিক নামঃ (Treron apicauda)। এরা ‘হরিয়াল বা হরিকল’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন…
•রাজ হরিয়াল •লেজচোখা হরিয়াল •ছোট হরিয়াল
•ঠোঁট মোটা হরিয়াল •কমলাবুক হরিয়াল •হলুদ পা হরিয়াল

প্রজাতিটি লম্বায় ৪১-৪৩ সেন্টিমিটার (লেজ ২৪ সেন্টিমিটার)। পুরুষ পাখির লেজ দীর্ঘ সুঁচালো। ওজন ২১৫ গ্রাম। মাথা সবুজাভ হলুদ। গলাবন্ধের রঙ সবুজাভ-জলপাইয়ের সঙ্গে সবুজ মিশ্রিত। ঘাড় ও পিঠের মাঝ বরাবর ধূসরাভ। ডানার উপরে বিভিন্ন ঘনত্বের হলুদাভ পট্টি, প্রান্ত কালো। বুক হালকা কমলা। লেজের নিচের দিকটা লালচে। চোখ লাল। ঠোঁটের উপরের অংশ সবুজ, নিচের অংশ নীলচে। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। অপরদিকে স্ত্রী পাখির লেজ খাটো। দেহের বর্ণ অনুজ্জ্বল। গলাবন্ধ নেই। বুকের কমলা রঙ অনুপস্থিত।

প্রধান খাবারঃ বট-পাকুড় ফল, এ ছাড়াও অন্যান্য ছোট ফল-ফলাদি খায়। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। গাছের পত্রপল্লভের আড়ালে লতাপাতা, চিকন কাঠি দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২ টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।