হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা | Buffy Fish Owl | Ketupa ketupu

1218
হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা
হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট

হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। দেশের সুন্দরবন ছাড়া অন্যত্র দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। কেউ দেখে থাকলে সেটি বিপদগ্রস্ত পাখি হতে পারে। মূলত এরা নদ-নদী, হ্রদ কিংবা বড়সড়ো জলাশয়ের কাছাকাছি বৃক্ষে বিচরণ করে। বিচরণের ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ এলাকা বেশি পছন্দের। এছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উচ্চতায় দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। অন্যসব পেঁচাদের মতো এরাও দিনের বেলায় গাছ-গাছালির ঘন পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। দিনের আলো ফুরিয়ে এলে বা গোধূলিলগ্নে শিকারে বের হয়। একাকী কিংবা জোড়ায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দলবেঁধে বিচরণ করে না। দেখতে ভয়ঙ্কর দর্শন হলেও একেবারেই নিরীহ গোত্রের পাখি।

স্বভাবে লাজুক। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো হিংস নয়। কণ্ঠস্বর ভৌতিক। ভরাট কণ্ঠে ‘বুপ্-বুপ্-বুপ্-বুপ্’ আওয়াজ করে মানুষের কলজে কাঁপিয়ে দেয়। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের মানুষ এদের কণ্ঠস্বর শুনতে না পেলেও সুন্দরবনে কর্মরত বাওয়াল, মৌয়াল কিংবা জেলেরা মাঝে মধ্যে শুনতে পান। বাংলাদেশের বাইরে এদের বিস্তৃতি ভারত, দক্ষিণ মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার জাভা-বালি পর্যন্ত। আমাদের দেশে প্রজাতিটি বিরল দর্শন হলেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়।

পাখির বাংলা নামঃ হলদে-বাদামি ভূতম পেঁচা, ইংরেজি নামঃ বাফি ফিস আউল, (Buffy Fish Owl), বৈজ্ঞানিক নামঃ Ketupa ketupu | এরা ‘মেটে মেছোপেঁচা’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•খয়রা মেছো পেঁচা •কোটরে পেঁচা •ডোরা কালিপেঁচা •ছোটকান পেঁচা
•চিতিপেট হুতুমপেঁচা •খাকি ভুতুম পেঁচা •ভূমা পেঁচা •খয়রা গাছপেঁচা
•উদয়ী নিমপেঁচা •কালো পেঁচা •লক্ষ্মীপেঁচা

দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৮-৪৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মাথা ও ঘাড় হলদে-বাদামি ডোরাযুক্ত। মাথার দু’পাশে আছে কান পশম, যা ঝুঁটি আকৃতির দেখায়। চোখের দু’পাশে কপালের ওপর সাদা টান। মুখমণ্ডল হলদে-বাদামি। দেহের উপরাংশ গাঢ় বাদামি রঙের ঘন মিহি রেখা। ডানার ওপরে সাদাটে দাগ। দেহের নিচের দিকে হলদে-বাদামির আড়াআড়ি রেখা। গোলাকার চোখের বলয় হলুদ রঙের। তারা গাঢ় বাদামি। ঠোঁট শিং রঙা, আকারে খাটো, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে হলদে।

প্রধান খাবারঃ মাছ, কাঁকড়া সরীসৃপ, ইঁদুর, ব্যাঙ ও বাগদাচিড়িং। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-২৯ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক সময় লেগে যায়।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।